৪৩ বছর পরে ইসি পেল নতুন ভবন

২০১৭ সাল শেষের দিকে। এই এক বছরে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অনেক নতুনত্ব এসেছে। ৪৩ বছর পরে নতুন নির্বাচন ভবনের সঙ্গে এসেছে নতুন নির্বাচন কমিশনও।

তবে এই বছরের নতুন ইসির সব থেকে বড় পাওয়া হচ্ছে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এই নির্বাচন দেশের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য করতে সক্ষম হয়েছে নুরুল হুদা কমিশন।

৪৩ বছর পর ‘নিজস্ব ভবনে’ ইসি
দীর্ঘ ৪৩ বছর পর চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি দাপ্তরিক কাজ পরিচালনার জন্য ‘নিজস্ব ভবন’ পেয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্মিত ১১ তলাবিশিষ্ট সুদৃশ্য এ ভবনে অফিস করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) অন্য কমিশনাররা। পাশাপাশি ইসি সচিবালয়ে কর্মকর্তারাও প্রথমবারের মতো অফিস করেছেন এখানে। এই নতুন ভবন পেয়ে উৎফুল্ল ছিলেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

রকিব কমিশন নতুন ভবনে উঠতে পেরে খুশি
এদিকে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ ও নির্বাচন কমিশনাররা নিজেদের মেয়াদে নিজস্ব ভবনে উঠতে পেরে খুশি হয়েছিলেন। নতুন অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নতুন ভবনে কাজ শুরু করার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, ‘আমরা এতদিন অন্যের বাড়িতে ছিলাম। এখন নিজেদের বাড়িতে এসেছি। আপনারাও (সাংবাদিকরা) এতদিন সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আমাদের প্রশ্ন করতেন, এখন নতুন ভবনের রুমে বসে প্রশ্ন করতে পারবেন।’

নতুন ইসির যাত্রা নতুন ভবন থেকেই
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নতুন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সদস্যরা শপথ গ্রহণ করেন। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা প্রথমে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে শপথবাক্য পাঠ করান। পরে একে একে কমিশনের অন্য চার সদস্যকে শপথ করান। পরে তারা শপথ বইয়ে স্বাক্ষর করেন। শপথ শেষে প্রধান বিচারপতির চা চক্রে অংশ নেন নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা।

শপথের মধ্য দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশনের যাত্রা শুরু হলো। এই কমিশনের অধীনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ আগামী পাঁচ বছর বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

শপথ অনুষ্ঠানের পরপরই কমিশনের সদস্যরা আগারগাঁও নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে যান। সিইসির সঙ্গে শপথ গ্রহণ করেন চার নির্বাচন কমিশনার সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার, সাবেক সচিব মো. রফিকুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ বেগম কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদত হোসেন চৌধুরী।

নির্বাচনে নতুন ইসির ‘রোডম্যাপ’
গত ১৬ জুলাই একাদশ সংসদ নির্বাচনের কাজের তালিকা বা রোডম্যাপ প্রকাশ করে নতুন ইসি। ভোটের আগে সংসদ নির্বাচনের অন্যতম পাঁচটি অনুষঙ্গকে অগ্রাধিকার দিয়ে ২০১৮ সালের অগাস্টের মধ্যে সেসব কাজ শেষ করার কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সাতটি কর্মপরিকল্পনা সামনে রেখে এটি বই আকারে প্রকাশ করার প্রস্তুতি নিয়েছে সংস্থাটি।

রোডম্যাপে যে সাতটি কর্মপরিকল্পনা রয়েছে তা হলো আইনি কাঠামোগুলো পর্যালোচনা ও সংস্কার। নির্বাচন প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও যুগোপযোগী করতে সংশ্লিষ্ট সবার পরামর্শ গ্রহণ। সংসদীয় এলাকার নির্বাচনী সীমানা পুনঃনির্ধারণ। নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সরবরাহ। বিধি অনুসারে ভোটকেন্দ্র স্থাপন।

নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন এবং নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিরীক্ষা এবং সুষ্ঠু নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট সবার সক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ।

রোডম্যাপ অনুযায়ী, চলতি মাসের ৩১ জুলাই সুশীল সমাজের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে সংলাপ শুরু হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে ধারাবাহিকভাবে এই সংলাপ চলে। সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

নতুন ইসির প্রথম নির্বাচন কুমিল্লায়
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণ ‘সুষ্ঠুভাবে’ সম্পন্ন করার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশনের অধীনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অংশগ্রহণে কুমিল্লাই ছিল প্রথম বড় ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এটিকে দৃষ্টান্তমূলক করতে চেয়েছিল ইসি।

নির্বাচনের পর সিইসি বলেছিলেন, নারায়ণগঞ্জের পর এবার কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। কমিশন তাদের নিরপেক্ষতা প্রমাণ করেছে। জনগণের প্রত্যাশা আগামী নির্বাচনগুলোও সুষ্ঠু হবে।

রসিক ভোট ইতিহাসের অন্যতম সেরা নির্বাচন
গত ২১ ডিসেম্বর হয়ে গেছে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে রংপুরের ভোট। বিজয়ী হয়েছে জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী। নির্বাচন পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার মোঃ রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আমরা বলেছিলাম রংপুর সিটি করপোরেশনে মডেল নির্বাচন করবো। সেই মডেল নির্বাচন হয়েছে। এই নির্বাচনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে নির্বাচন ব্যবস্থা আরও উন্নত করবো।’

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মোঃ রফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘আমরা চেয়েছি এ নির্বাচনকে মডেল নির্বাচন হিসেবে জনগণকে উপহার দিতে। পেশি শক্তি যাতে কেউ না খাটাতে পারে সে বিষয়ে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। ভোটাররা যাতে সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারে এবং প্রার্থীরা সবাই যেন সমান সুযোগ পায় সেটা নিশ্চিত করাই ছিল আমাদের মূল লক্ষ্য।’

এদিকে গত ২৩ ডিসেম্বর ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা নির্বাচন আখ্যা দেয়।

ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের পরিচালক ড. মো. আব্দুল আলীম বলেন, ‘রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন কোন ধরনের সহিংসতা ও নির্বাচনী অনিয়ম ছাড়াই উৎসব-আমেজে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ নির্বাচন ছিল সামগ্রিক ভাবে শান্তিপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য। ভোটাররাও ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে সুশৃঙ্খলভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছেন।’

চলমান আছে স্মার্টকার্ড বিতরণ
সিটি করপোরেশন এলাকার পর গত ১ ডিসেম্বর থেকে জেলা পর্যায়ে স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে ইসি। যা এখনো চলমান আছে। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি) মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম জানান, বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের ১ তারিখ থেকে দেশের অর্ধেক জেলায় (জেলা সদর) একযোগে স্মার্টকার্ড বিরতণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘জানুয়ারির মধ্যে ২ হাজার ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ২ হাজার চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি নেওয়ার মেশিন কেনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সেগুলো পেলে ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে।’

উল্লেখ্য, গত বছরের ২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। পরদিন ৩ অক্টোবর থেকে রাজধানী ঢাকা ও বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীদের মাঝে কার্ড বিতরণ শুরু হয়।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment